Adamas University is going to organize ANVESHAN- Student Research Convention, an initiative of AIU on 17th and 18th January 2025.
Covid-19

The days of corona

দেশ ভাল নেই। সময় ভাল নয়। 

 

প্রায় একমাসের কাছাকাছি হল বিশ্বামহামারীর দৌলতে আমরা ঘরবন্দি। কেউ একলা, কেউ বিদেশে, কেউ নিজভূমেই পরবাসী। যারা প্রিয়জনের কাছে… তারাও খুব একটা সুস্থ জীবন কাটাচ্ছে না। সারাক্ষণ মনে আতঙ্ক, যদি কোনওভাবে সুরক্ষাবলয় পেরিয়ে ঢুকে পড়ে একটুকরো বিষ? মানুষ বাজারে যাচ্ছেন যেন ঘরের পাশেই যুদ্ধ। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। টিভি আর খবরের কাগজে মৃত্যুর হিসেব, নতুন আক্রান্তের খবর… আর নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা। পৃথিবী যেন এক লহমায় প্রলয় দেখে ফেলেছে। যে সব পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপটিক সিনেমা বা সিরিজ অন্য সময়ে গোগ্রাসে গিলি, যেন তারই প্রতিচ্ছবি চেনা রাস্তায়, পাড়ার মোড়ে। আরও ঘন অন্ধকার ঘিরে আসছে মাথার ভেতর। ক্রমশ আরও চেপে ধরছে চার দেওয়াল, শ্বাসরুদ্ধ করে দিচ্ছে। একটু আকাশ, রোদ্দুর, হাওয়ার জন্য কত আকুলিবিকুলি! শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে, সুর পথ হারাচ্ছে, বিবর্ণ হচ্ছে ছবি। এই অসময়ে কী করতে পারি আমরা?

 

আমার ব্যস্ততার অভাব নেই। অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত রুটিন ধরে অনলাইন ক্লাস চলছে। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এই সামান্য কথাবার্তা, পড়ানো, তাদের মুখটুকু দেখতে পাওয়া – এ যেন চারপাশের অস্বাভাবিকতা তেমন টের পেতে দিচ্ছে না। নিজস্ব পড়াশোনা বা চর্চা আছেই। তারপরেও… ক্লান্ত লাগে। সমস্ত দিন মোবাইল এর ল্যাপটপে ঘিরে থাকার পর প্রিয় সিনেমা দেখতে আর চোখ যায় না। সাংসারিক কাজকর্ম অগুনতি, অনভ্যস্ত হাতে সেসবও সামলাতে হচ্ছে বইকি! রোজকার কাজ করেন যাঁরা, তাদের ছুটি। হ্যাঁ, পারিশ্রমিক সহ। ওঁরা যদি আমাদের থেকে সাহায্য না পান, কার কাছে সাহায্য চাইবেন? আমরা হাত বাড়ালেই যাঁদের পাই, আজ তাঁদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দিন। 

 

ব্যস্ততার ক্লান্তি বড় সুন্দর। তাকে আপাতত পাশে রেখেই সহনাগরিক হিসেবে কিছু কথা বলে যাওয়ার। হয়তো সবাই জানেন, তবু ফের বলা প্রয়োজন। 

  • পরিচ্ছন্ন থাকুন, বিচ্ছিন্ন থাকুন। যাদের বয়স কম, তারা হয়তো এই রোগের থাবা থেকে ফিরে আসবে। আসছেও। কিন্তু আমাদের এতটুকু গাফিলতি বয়স্ক, অশক্ত, দুর্বল অনেক মানুষের কাছে মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। জানি, আমাদের অভ্যেস যৌথতার। কিন্তু গোষ্ঠীই যেখানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে, সেখানে সংযমের কোনও বিকল্প নেই। তাছাড়া, ঐক্য একটি মানসিক ধারণা। যদি হাতে হাত না রাখলেই পাশে থাকার অনুভূতি মিথ্যে হয়ে যায়, তাহলে সে ঐক্যের ভিত্তি কী? মনে মনে ঐক্যবদ্ধ থাকুন, পাশের লোকটির থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বুঝিয়ে দিন, সঙ্গে আছি।

 

  • যে খবরের ভিত্তি নেই, তাকে বিশ্বাস করবেন না। ক’জন আক্রান্ত বা মৃত, তার পাশাপাশি ক’জন সেরে উঠল, তার পরিসংখ্যান রাখুন। যা ন্যাশনাল টেলিভিশন বা খবরের কাগজে নেই, তা দুম করে বিশ্বাস করবেন না, ছড়িয়েও দেবেন না। বাড়িতে অনেক সময় পাচ্ছেন, গুগল করতে শিখুন, নকল খবর চিনতে শিখুন। একটা ঠিক তথ্য আমাদের বহুদূর এগিয়ে দিতে পারে। অজস্র ভুল তথ্য যেন পা না চেপে ধরে।

 

  • ছাদ বা ব্যালকনিতে যান। বাড়ির সামনে দাঁড়ান। হাওয়ায় জীবাণু নেই। অন্য লোকের ড্রপলেটে আছে। মুখহাত ঢেকে দিনে একবার আকাশের নীচে দাঁড়ান।

 

  • পাড়ায় কুকুর-বেড়াল চিরকাল ছিল, পাখিরাও। তাদের গায়ে হাত দেবেন না এখন। কিন্তু যারা আপনার দরজার সামনে এসে অভ্যস্ত, তাদের অভ্যেস কেড়ে নিলে না খেয়ে মরে যাবে। কিছু বাড়তি বা বাতিল খাবার বাইরে রেখে দিন, আর একবাটি জল।

 

  • দোকান খোলা থাকছে। পাগলের মতো খাবার জমাবেন না। এক সপ্তাহের রেশন তুলে আনুন। তার বেশি নয়। আপনাকে কেউ বাঙ্কারে রেখে দিচ্ছে না। আপনার অনাবশ্যক সতর্কতায় অন্যের ক্ষতি হতে পারে। পাঁচ বস্তা মুড়ি আপনার লাগবে না। কিন্তু কেউ কেউ আছে যাদের সারাদিনের একমাত্র খাবার মুড়িই। তাদের কথা মনে রাখুন।

 

  • কুড়ি সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধোয়া যথেষ্ট। স্যানিটাইজারের সুইমিং পুল তৈরি করার প্রয়োজন নেই।

 

  • ওষুধ, মাস্ক, পিপিই কিট তাদের বেশি প্রয়োজন যারা এই অসুখে ভুগছে, কিংবা রোগীদের সরাসরি সংস্পর্শে আসছে। আপনি বাড়িতে বসে নেটফ্লিক্সই দেখবেন। অকারণে এইসব তুলে এনে বাড়িতে জমাবেন না। চৈত্র সেলের বাজার বসবে না এবারে।

 

  • চিরকাল সময়ের অভাবে করতে না পারা শখ মিটিয়ে নিন। আর, মোবাইল সরিয়ে সেই মানুষগুলোকে সময় দিন যারা একই বাড়িতে থাকে, কিন্তু আপনি ভুলে গেছেন। মনে করে দেখুন, শেষ কবে এমনিই আদিখ্যেতা করে মাকে জড়িয়ে ধরেছেন। বাবার সঙ্গে ফাজলামি মেরেছেন। বউ বা বরের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন বন্ধুর মতো। দেখবেন, বহুদিন হয়ে গেল। সময় পেয়েছেন, সম্পর্কগুলো ঝালিয়ে নিন। কে জানে, ফের হয়তো সময় পাবেন না।

 

  • কথা বলুন। অনেক। নিজের মাতৃভাষাকে জিভে রাখুন প্রিয় স্বাদের মতো। সব মনখারাপ উগরে দিন। যে আড্ডা বাইরে হচ্ছে না, ভিডিও কলে সারুন নিয়ম করে। গালাগাল দিন, ইয়ার্কি মারুন, জোক বলুন, লকডাউন উঠলে কী কী করবেন তার প্ল্যান করুন জমিয়ে। অনেক কথা ভাসিয়ে দিক থমথমে আতঙ্ক।

 

  • বই পড়ুন। শুধু কিন্ডল বা মোবাইলে নয়, আঙুল দিয়ে পৃষ্ঠা ছুঁয়ে। আমাদের অনেক গল্প লেখা হয়ে গেছে। অনেক অসময়ের দলিল বইয়ের হরফগুলো। অনেক চরিত্রের যাপন, অনেক মনস্তত্ত্বের আনাগোনা তারা জমিয়ে রেখেছে। তাদের চিনে নিন। কে বলতে পারে, হয়তো আপনিই খুঁজে পেয়ে গেলেন ভাল থাকার চাবি!

 

  • আরও কত কী করার আছে! যা ভাল লাগে করুন। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। সবই তো কেটে যায়। বিচ্ছেদ, বিশ্বাসঘাতকতা, যুদ্ধ, দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ। ইতিহাস সাক্ষী, সময়ের কাছে কেউ জয়ী নয়। আজ সময় নিজে থেকে ধরা দিয়েছে। তাকে সঙ্গে নিয়ে এই মহামারীকাল আমরা পেরিয়ে যাব ঠিকই। হয়তো বলার মতো গল্প থেকে যাবে, ‘জানিস তো, আমরা প্যানডেমিক দেখেছিলাম!’ উত্তরে আপনার নিষ্পাপ আগামী জানতে চাইবে, ‘তখন তুমি কী করছিলে?’ আমরা তখন যেন বলতে পারি, ‘মানুষের পক্ষে ছিলাম। সৃষ্টির পক্ষে ছিলাম। শুভপক্ষে ছিলাম।’

সবাই সুস্থ থাকবেন। 

 

Visited 1220 times, 2 Visits today

Skip to content