বিশ্ব জুড়ে চলেছে এক অতিমারী- কোভিড ! যার প্রভাব সমস্ত স্তরের মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কোভিড মহামারী এক অত্যন্ত কঠিন সময় তবে এই কঠিন দিনগুলি কাটিয়ে আমাদের প্রত্যেককেই স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরতে হবে। আজ আমরা এই সময়ের কিছু স্বাভাবিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব।
কবে এবং কিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি খুলবে?
- পৃথিবী জুড়ে যে কোভিড মহামারী ছড়িয়েছে সেই দিনগুলিকে অতিক্রম করে ক্রমশ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলি খুলছে। বিশ্ব জুড়ে স্কুল বন্ধের নির্দেশ কাটিয়ে প্রায় সত্তরটি দেশ স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।কবে ,কখন , কোন পরিস্থিতে এই সিদ্ধান্ত লাগু হবে তা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার যৌথ আলোচনার মাধ্যমে স্থিরীকৃত হবে। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক প্রশাসনের ও বিশেষ ভূমিকা থাকতে পারে।
- সাধারণের স্বাস্থ্য, শিক্ষাদানের সুবিধা ও সঙ্কট , রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতি বিচার করেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অভিভাবকদের মনে প্রথমেই যে প্রশ্ন জাগবে তা হল- আমার সন্তানের স্কুলে যাওয়া কতটা নিরাপদ?
- এ বিষয়ে প্রথমেই বলা যায় শিক্ষার্থীদের জন্য যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ নিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি করা যাবে, কেবলমাত্র তখনি প্রতিষ্ঠানগুলি খোলার অনুমতি পাবে । এর জন্য যথাযথ ভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী জীবাণুমুক্ত করণ করতে হবে। বিধিসম্মতভাবে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।ছাত্র-ছাত্রীদের ছোট ছোট দলে ভেঙ্গে সেকশন ভাগ করে ক্লাস করানোর ব্যাবস্থা করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকা বাধ্যতামূলক। মুখে মাস্ক পরা আবশ্যিক।
কোভিডের ভাইরাস যাতে না ছড়ায় তার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কি কি ব্যবস্থা নিতে পারে?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি নিশ্চই খুলবে তবে শিক্ষার্থী , শিক্ষক , অশিক্ষক কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে যা যা পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
- ক্লাস শুরু ও শেষের সময়সূচীর পরিবর্তন
- নির্দিষ্ট সময় অন্তর হ্যান্ড স্যানিটাইজে্সনের ব্যবস্থা করা
- অধিক সংখ্যক ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা
- টিফিনের সময় যাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা
- বিভিন্ন শিফটে স্কুলে ক্লাস করা যাতে ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়
- পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা
- পরিচ্ছন্নতা সুনিশ্চিত করা
- সর্বসময়ের জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে যাতে নাক ও মুখ আবৃত থাকে
- শুধুমাত্র ছাত্র ছাত্রী নয় , স্কুলের সমস্ত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে।
চিকিৎসকদের নির্দেশ এই অভ্যাসগুলিকে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গী করে ফেলা দরকার। আগামী কয়েক বছর এই ভাইরাস আমদের প্রতিনিয়ত আক্রমণ করবে তাই ব্যক্তিগত অভ্যাস ও জীবন চর্জায় যদি আমরা এই আচার গুলিকে অভ্যাসে পরিণত করতে পারি তবেই হয়ত আমাদের পরিবার তথা বৃহত্তর সমাজ সুরক্ষিত থাকতে পারবে।
দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ না যাওয়ার ফলে যদি আমার সন্তান পিছিয়ে পরে—
পড়াশোনার পাশাপাশি সন্তানের মানসিক স্বাস্থের প্রতিও আমাদের যত্নবান হতে হবে।দীর্ঘ কয়েক মাসের বেশি সময় ধরে সে বাড়ি থেকে বেরোয় নি, স্কুলে যায় নি, সামাজিক ব্যবহারে তার ছেদ পরেছে।খুব স্বাভাবিক ভাবেই স্কুলে ফেরার প্রাথমিক দিনগুলি হয়ত সহজ হবে না। আপনাকেও যেমন কাজে যোগ দেবার আগে নিজের মানসিক প্রস্তুতি নিতে তবে ঠিক তেমনি আপনার সন্তানের দিকেও সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মনে করুন আপনার সন্তানের স্কুলে যাবার প্রথম দিন গুলির কথা। বেশিভাগ দিনই যে আপনার সাহচর্জ ছেড়ে অচেনা গন্ডিতে নিয়মের অনুশাসনের মধ্যে স্কুলে যেতে চাইত না। তখন যেমন তাকে বুঝিয়ে স্কুলে পাঠাতেন আজও আবার নতুন করে আপনার সন্তানের মনের খবর নিন। তাকে বোঝান যে স্কুলে তার সব বন্ধুরা আবার আসবে।হয়ত আগের মত এখন একসঙ্গে সকলে মিলে পায়ে পা মিলিয়ে ফুটবল খেলতে পারবে না কিন্তু এই এতদিনের নিভৃতবাসের আলাপচারিতা তো করা যাবে।
দেখবেন একটু সময় দিলেই আপনার দশ বছরের সন্তান নিজে থেকেই আবার স্কুল জীবনে ফিরে যেতে চাইবে।কোন নিয়মের ভার এখনি চাপিয়ে দেবেন না তার উপর। সময়ের সাথে একটু একটু করে দেখবেন সে এই নতুন পরিস্থিতিকে ও মেনে নিচ্ছে।কলেজে পড়া প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েদের মনে করিয়ে দিন বিকেলে ক্লাসের পর কমন রুমে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবার দিন গুলির কথা। এমনিতেই হয়ত বাইড়ে বেড়তে না পেরে তারা অনেকেই হাঁফিয়ের উঠেছে । খবর নিন তাদের মনের ও।
দীর্ঘ কঠিন সময় কাটিয়ে আমাদের প্রত্যেক্কেই কাজে ফিরতে হবে। কোভিড পুর্ব আর কোভিড পরবর্তী সময়ের মধ্যে ঘটে গেছে আমূল পরিবর্তন।সারা পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়েছে অন-লাইন পড়াশোনার চর্চা ।তা নিয়েও ছেলে মেয়েদের মনে চলছে নানা উৎকণ্ঠা । অদূর ভবিষ্যতে হয়ত আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি সেদিকেই পরিবর্তিত হবে, তবে এখনও ক্লাসে সামনাসামনি শিক্ষা দানের পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা যাচ্ছে না।তবে মানুষেরই আছে এই পরিবর্তনের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে এগিয়ে চলার ক্ষমতা। তাই যথাযথ সচেতনতা আর অভ্যাস আমাদের এই নতুন পথ চলাকে করে তুলবে মসৃণ ও প্রবহমান। কারণ থেমে যাওয়াকে জীবন বলে না। বদলে যাওয়া পৃথিবীর প্রতিটি পরিবর্তনকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করাই হল বেঁচে থাকার মূল মন্ত্র।
Visited 5500 times, 2 Visits today